স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আইন সাম্যকে অর্থবহ করে তোলে। রাষ্ট্র আইন প্রয়োগ করে অসাম্যকে দূর করতে পারে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে যুগে যুগে অনেক আইন সহায়তা করছে। ভারতে আইন করে অস্পৃশ্যতা দূর করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় আইন করে বর্ণভেদ প্রথা দূর হয়েছে এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই আইন করে সকল প্রকার আসাম্য দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক অত্যান্ত নিবিড়। সাম্য নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতার প্রয়োজন, স্বাধীনতার শর্ত পুরুন না হলে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় না। আবার স্বাধীনতাকে ভোগ করতে চাইলে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তা না হলে দুর্বলের সাম্য সবলের সুবিধায় পরিণত হবে। সাম্য ও স্বাধীনতা একই সাথে বিরাজ না করলে গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করার প্রশ্নই ওঠেনা। সাম্য উচঁ নীচুর ভেদাভেদ দূর করে, আবার স্বাধীনতা সমাজের সুযোগ-সুবিধাগুলো ভোগ করার অধিকার দান করে।
কোল এর মতে অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন।
আর এইচ টনি এর মতে স্বাধীনতা বলতে মানবতার নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রসারণ বোঝায়, তাহলে সেই স্বাধীনতা সাম্যভিত্তিক সমাজেই শুধু সম্ভব।
অধ্যাপক পোলার্ড এর মতে স্বাধীনতার সমস্যার একটিমাত্র সমাধান রয়েছে, সাম্যের মাঝেই তা নিহিত।
আদর্শ সাম্য হিসেবে স্বাধীনতার সুসমন্বিত রুপ প্রকাশ পায় ১৭৭৬ সালে, আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে এবং ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের ঘোষণায়।
সুতরাং বলা যায় যে স্বাধীনতা ও সাম্যের সম্পর্ক অত্যান্ত গভীর। স্বাধীনতা ও সাম্য একে অপরের পরিপুরক ও সহায়ক। স্বাধীনতা ও সাম্য একই সাথে বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে প্রভাবিত ও নিয়ন্তণ করে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে সাম্য থাকতে হবে। সাম্য না থাকলে ব্যক্তি তথা সমাজজীবন পুর্ণতা প্রাপ্ত হয় না। সুতরাং স্বাধীনতা ও সাম্য বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ জন্যই বলা হয় যে, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে রয়েছে একটি দ্বি-মাত্রিক সমগ্রতা।